Bismillahitzone

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর সকল সেক্টরের মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় সেক্টর হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন। গ্রাফিক্স ডিজাইনে দক্ষ হতে পারলে মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করা সম্ভব। মূলত আজকে গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরব। তাই সকল তথ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানতে সাথেই থাকুন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি?

মূলত কম্পিউটারে বিভিন্ন গ্রাফিক্স সফটওয়্যার ব্যবহার করে কাস্টমারের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি মার্জিত ইমেজ অথবা ভিডিও পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করাকে গ্রাফিক্স ডিজাইন বলা হয়। সহজ ভাষায় একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার যে কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকে তাকে গ্রাফিক্স ডিজাইন বলে। টাইপোগ্রাফার উইলিয়াম এ. ডুইগিন্স উদীয়মান ক্ষেত্র চিহ্নিত করার জন্য ১৯২২ সালে সর্ব প্রথম গ্রাফিক ডিজাইন নামক শব্দটি তৈরি করেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার

গ্রাফিক্স ডিজাইনের সেক্টরকে প্রধানত ৭ ভাগে ভাগ করা হয়। অর্থাৎ, ৭ প্রকার। যেমন,

  • লোগো ডিজাইন
  • ব্র্যান্ডিং ডিজাইন
  • প্রোডাক্ট অথবা পণ্যের ডিজাইন
  • পাবলিশিং ডিজাইন
  • প্রিন্ট ডিজাইন
  • অ্যানিমেশন বা মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • ওয়েবসাইট ডিজাইন

ওপরে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ৭টি প্রকার তুলে ধরা হয়েছে। উক্ত বিষয় গুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য নিচে উল্লেখ করা হলো।

লোগো ডিজাইন

যদি আপনি কোন ব্র্যান্ড অথবা বিজনেস শুরু করতে চান তাহলে শুরুতেই আপনার একটি মার্জিত লোগো প্রয়োজন হবে জাতে করে আপনার ব্রান্ড ভ্যালু বাড়ে। একজন লোগো ডিজাইনারের কাজ হচ্ছে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে সকল তথ্য জেনে আপনার ব্রান্ডের সাথে মিল রেখে পরিপূর্ণ ভাবে  একটি লোগো ডিজাইন করা। লোগো যত ভালো মানের হবে ব্রান্ড ভ্যালু ততো বাড়বে।

আমরা যদি খেয়াল করি ফেসবুক এবং ইউটিউবের দিকে তাহলে তাদের লোগো দেখে আমরা কিন্তু খুব সহজে চিনতে  পেরে যায়। ঠিক এইভাবেই যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড ভ্যালু এড করতে একটি মার্জিত লোগো ডিজাইন খুবি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এবং ব্রান্ড চালু হওয়ার জন্য একজন লোগো ডিজাইনারের চাহিদা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে।

ব্র্যান্ডিং ডিজাইন

শুরুতেই বলে রাখা ভালো যে, ব্র্যান্ডিং ডিজাইন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নিদিষ্ট প্রোডাক্টের প্রোমোটিং ট্যাগলাইন অথবা বিপণন বার্তা পরিপূর্ণভাবে গ্রাহকদের কাছে পৌছে দেয়া হয়। যার কারনে প্রোডাক্টটির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য পূরণ হয়।

প্রোডাক্ট অথবা পণ্যের ডিজাইন

বর্তমান সময়ে নতুন নতুন প্রোডাক্ট তৈরি হওয়ার কারনে একজন প্রোডাক্ট ডিজাইনারের চাহিদা বেড়ে চলছে। তবে প্রোডাক্ট ডিজাইন করার ক্ষেত্রে আপনি যে প্রোডাক্ট নিয়ে ডিজাইন করতে চান সেই  প্রোডাক্ট এর সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান থাকার পাশাপাশি গ্রাহকের চাহিদার জন্য বাণিজ্যিক ধারণা থাকতে হবে। এর পরবর্তীতে পণ্য বাজারজাত করার আগে পণ্য গ্রাহকের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য কিছু ডিজাইন সম্পর্কিত স্যাম্পল বানাতে হবে। এর পাশাপাশি ভালোভাবে প্রোডাক্ট ডিজাইন সম্পন্ন করতে গেলে কিছু বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। যেমন, 

  • মার্কেট রিসার্চিং
  • প্রোটোটাইপিং
  • এবং থ্রিডি মডেলিং 

মূলত প্রোডাক্ট অথবা পণ্যের ডিজাইন সম্পন্ন করতে উপরের ৩ টি বিষয়ে দক্ষ হওয়া খুবি জরুরী।

পাবলিশিং ডিজাইন 

কোন ম্যাগাজিন অথবা বই পাবলিশিং এর ক্ষেত্রে পাবলিশিং ডিজাইন একটি পরিচিত নাম। বিভিন্ন বই হোক অথবা ম্যাগাজিন সেখানে যদি নজরকাড়া ডিজাইন থাকে তাহলে খুব সহজে পাঠকের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা পাওয়া যায়। একজন পাবলিশিং ডিজাইনার মূলত  বই অথবা ম্যাগাজিনকে ডিজাইন করে পাঠকের কাছে  এমন ভাবে উপস্থাপন করেন যাতে করে পাঠকরা পড়তে আকৃষ্ট হয়। 

প্রিন্ট ডিজাইন

বর্তমান যুগে এসে ইন্টারনেট এবং তথ্যপ্রযুক্তির আধিপত্যের কারণে ডিজিটাল ডিজাইন সবার শীর্ষ থাকলেও প্রিন্ট ডিজাইনও কিন্তু কোন দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের বিলবোর্ড, বিজনেস কার্ড এবং প্রচারপত্র ছাড়াও তাদের নিজের প্রতীক অথবা লোগো সম্বলিত টি-শার্ট, মগ এবং অন্যান্য স্টেশনারি আইটেম ইত্যাদির কাজ সম্পূর্ণ করেন একজন  প্রিন্ট ডিজাইনার। তবে প্রিন্ট ডিজাইনে সফল হতে গেলে ২ টি বিষয়ে পর্যাপ্ত পরিমানে জ্ঞান থাকা খুবি জরুরি।যেমন,

  • লেআউট ডিজাইন
  • ডিজিটাল মাধ্যমে বিভিন্ন রঙের ব্যবহার

অ্যানিমেশন বা মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইন

আমরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কার্টুন, অ্যানিমেশন ভিডিও,মোশন ভিডিও এবং ভিডিও গেমস দেখে থাকি। এই কাজগুলো মূলত একজন অ্যানিমেশন বা মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইনার সম্পন্ন করে থাকেন।প্রথমের দিকে একজন অ্যানিমেশন ডিজাইনার রাফ স্কেচিং করেন এবং পরবর্তীতে দক্ষতা বাড়িয়ে ধীরে ধীরে অ্যানিমেশন বা মোশন ভিডিওর দিকে অগ্রসর হন।এক্ষেত্রে  সঠিক ডিজাইন করতে গেলে মানসিক দক্ষতা এবং  সৃজনশীলতা থাকার খুবি দরকার রয়েছে।

ওয়েবসাইট ডিজাইন

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর সময় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করছি এবং ডাউনলোড করে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যাবহার করছি। মূলত এই ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপগুলোর নান্দনিকতার পেছনে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের সম্পূর্ণরুপে অবদান রয়েছে। ওয়েবসাইট ডিজাইনের ক্ষেত্রে ডিজাইনারকে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন অথবা UX সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান এবং সম্পূর্ণ ধারনা রাখতে হবে। যাতে করে যেকোন মোবাইল ডিভাইস অথবা ডেক্সটপে অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে কোন সমস্যা না হয় বরং সুবিধা হয়। আর ওয়েবসাইট ডিজাইন এর ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে দক্ষ হওয়াটা জরুরী।যেমন,

  • ব্র্যান্ডিং দক্ষতা
  • বেসিক কোডিং দক্ষতা
  • ওয়্যারফ্রেমিং এবং
  • ইউএক্স ডিজাইন দক্ষতা

উপরোক্ত বিষয় গুলো সম্পর্কে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে পারলে অনায়াসে ওয়েবসাইট ডিজাইন করা যায়।

সচরাচর জিজ্ঞাশিত প্রশ্ন FAQ

প্রশ্নঃ গ্রাফিক্স দুই প্রকার কি কি?

উত্তরঃ কম্পিউটারে  ২ ধরনের গ্রাফিক্স রয়েছে। যেমন,

  • রাস্টার গ্রাফিক্স
  • এবং ভেক্টর গ্রাফিক্স

প্রশ্নঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন এর জনক কে?

উত্তরঃ টাইপোগ্রাফার উইলিয়াম এ. ডুইগিন্স।

প্রশ্নঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স কত মাসের?

উত্তরঃ গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোর্স সর্বনিম্ন ৬ মাসের হয়।

প্রশ্নঃ গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য কোন ডিগ্রি ভালো?

উত্তরঃ ব্যাচেলর অফ ফাইন আর্টস। সংক্ষেপে BFA

প্রশ্নঃ গ্রাফিক্স অর্থ কি?

উত্তরঃ গ্রাফিক্স অর্থ একটি সদৃশ মাধ্যম। যার দ্বারা কোনো পৃষ্ঠের উপর কিছু নকশা অথবা ছবি অংকন করাকে বোঝায়। 

শেষ কথা

আজকের পোস্টের মূল আলোচনার বিষয় ছিল গ্রাফিক্স ডিজাইন কি এবং  গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার তা নিয়ে। উপরের সম্পূর্ণ অংশ পড়ে আশা করি তথ্য গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। সর্বশেষ এরকম সকল তথ্য সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ওয়েবসাইট টি ভিজিট করুন ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *